ডা. নার্গিস মার্জান হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক। চিকিৎসায় এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পরও অল্টারনেটিভ চিকিৎসায় যুক্ত থেকে এর আধুনিকায়ন ও উৎকর্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হয়েছে কালবেলার—
কালবেলা: আপনি এমবিবিএস পাস করেও কেন এ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন? কোন বিষয়টি আপনাকে অনুপ্রাণিত করছে? ডা. নার্গিস মার্জান: আমি শৈশব থেকেই এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে ন্যাচারাল মেডিসিন নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা চলে আসছে। এজন্য এমবিবিএসের আগে ডিপ্লোমা অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (ডিইউএমএস) কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। পরীক্ষায় রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম হই এবং ফলাফলের জন্য স্বর্ণপদকও পাই। এতে ন্যাচারাল মেডিসিনের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে লক্ষ করেছি ইন্টিগ্রেটেড চিকিৎসা পদ্ধতিতে (একই সঙ্গে অ্যালোপ্যাথিক ও ন্যাচারাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করা) চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগীরা বেশি সুফল পাচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতির অনেক চিকিৎসককেও দেখেছি একই প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথিক ও ন্যাচারাল ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। আবার কনভেনশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রকৃতি, ওষুধ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, খরচ, একটি ওষুধ সেবনের ফলে আরেকটি জটিল রোগ; এসব দেখেছি। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক ওষুধ নিরাপদ ও কার্যকর। দেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই এর ওপর আস্থা রেখে আসছে। এটি অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ এখনো এই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করছে।
কালবেলা: প্রাকৃতিক ওষুধ সম্পর্কে বলুন... ডা. নার্গিস মার্জান: ন্যাচারাল মেডিসিন তথা প্রাকৃতিক ওষুধ হলো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, যা হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটা সময় ছিল যখন রোগ নিরাময়ের প্রধান অবলম্বনই ছিল শিকড়-বাকড় ও ঔষধি গাছ। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর আত্মনিরাময় শক্তিকে উদ্দীপ্ত করে তাকে সুস্থ করে তোলে। এই ভেষজ চিকিৎসা ব্যবস্থার দুটি শাখা রয়েছে—ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক। গ্রিসের ইউনান প্রদেশে প্রথম যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয় তাকে বলে ইউনানি। এ চিকিৎসা চারটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে—শ্লেষ্মা, রক্ত, হলুদ পিত্ত ও কালো পিত্ত। এতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় করে তা সমূলে নির্মূল করার চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যদিকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় রোগীকে একটি লাইফস্টাইলে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে তিনি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ক্যান্সার, লিভার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ওবেসিটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি থেকে মুক্তি পান।
কালবেলা: প্রাকৃতিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কী কী সীমাবদ্ধতা লক্ষ করেছেন? ডা. নার্গিস মার্জান: ন্যাচারাল মেডিসিন গবেষকদের নিরলস পরিশ্রমের ফল। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনেক উন্নতি করেছে। তারপরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—(ক) বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থার যে উন্নতি দেখছি, তা প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের মান বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যরা ইচ্ছে থাকলেও মান বজায় রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। (খ) সম্প্রতি আমাদের দেশে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওষুধের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বাড়লেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত উদ্ভিদের উৎপাদন বাড়েনি। এ ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। যার কারণে ব্যয়ও বেড়ে যায়। তাই দেশে ঔষধি উদ্ভিদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে, (গ) চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমবিবিএস পর্যায়ের সিলেবাসে ন্যাচারাল মেডিসিন অন্তর্ভুক্ত করেছে, ফলে তাদের দেশে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের দেশেও ক্রমান্বয়ে এমবিবিএস সিলেবাসে প্রাকৃতিক ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
She has authored research articles on medicinal plants, published in the Journal of Hamdard University Bangladesh.