NEWS প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনেক উন্নতি করেছে

ন্যাচারাল মেডিসিন সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

ন্যাচারাল মেডিসিন বা প্রাকৃতিক ওষুধ হলো এক ধরনের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ঐতিহ্যগতভাবে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটা সময় ছিল যখন রোগ নিরাময়ের প্রধান অবলম্বন হিসাবে ব্যবহৃত হতো কাঁচা শিকড়-বাকড় এবং ঔষধি গাছ-গাছড়া। এটাই ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূচনা। ন্যাচারাল মেডিসিনকে হার্বাল মেডিসিনও বলা হয়ে থাকে। এ চিকিৎসাব্যবস্থার দুটি শাখা রয়েছে। যথা- ইউনানী চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা।

* ইউনানী চিকিৎসা : গ্রিসের ইউনান প্রদেশে সর্বপ্রথম এ চিকিৎসাব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয় বলে একে ইউনানী চিকিৎসা বলা হয়ে থাকে। ইউনানী ওষুধ চারটি ধারণা ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যথা- শ্লেষ্মা, রক্ত, হলুদ পিত্ত ও কালো পিত্ত। এ চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগের মূল কারণ নির্ণয় করে তা সমূলে নির্মূল করার জন্য রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

* আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা : এ চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণগুলো দূর করার জন্য রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এছাড়াও এ চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগীকে একটি লাইফস্টাইলে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে রোগী বিভিন্ন ক্রনিক ডিজিজ (দীর্ঘমেয়াদি রোগ) থেকে খুব সহজেই মুক্তি লাভ করতে পারে। ক্রনিক ডিজিজ (দীর্ঘমেয়াদি রোগ) বলতে ক্যানসার, লিভার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ওবেসিটি, ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগকে বুঝায়।

ইন্টিগ্রেটেড পদ্ধতিতে (অর্থাৎ একই প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথিক ও ন্যাচারাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করা) চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগী অধিক সুফল পায়। কনভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক চিকিৎসককেও দেখা যায় তারা একই প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথিক এবং ন্যাচারাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করছে। এছাড়া কনভেনশনাল চিকিৎসাব্যবস্থার প্রকৃতি, ওষুধ, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসার ব্যয়বহুলতা, রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। পক্ষান্তরে, ন্যাচারাল মেডিসিন কার্যকরী ও নিরাপদ। এটি অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। ন্যাচারাল মেডিসিন চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। তবু কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন-

▶ বর্তমানে বাংলাদেশে অল্টারনেটিভ চিকিৎসাব্যবস্থার যে উন্নতি হয়েছে, তার জন্য দেশে প্রচলিত কনভেনশনাল অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই হয়েছে। উভয় চিকিৎসাব্যবস্থার সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ এবং মান বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যরা ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ও মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

▶ সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে এ চিকিৎসাব্যবস্থার ওষুধের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেলেও কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত ঔষধি উদ্ভিদের উৎপাদন ততটা বাড়েনি। ফলে আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয় বলে ওষুধের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ঔষধি উদ্ভিদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে এ খাতে ভর্তুকি প্রদান করে কৃষককে ঔষধি উদ্ভিদ চাষাবাদে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশেও ক্রমান্বয়ে এমবিবিএস সিলেবাসে ন্যাচারাল মেডিসিন অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।